December 23, 2024, 4:04 am
পেকুয়া প্রতিনিধি:
পেকুয়ায় স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্ধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর নিয়ন্ত্রন ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে দখলদার চক্র আত্মঘাতী ঘটনাও সংঘটিত করার চক্রান্তের সন্ধানও মিলছে। এমনকি অবৈধ স্থাপনা রক্ষার কৌশল হিসেবে ওই চক্র ভাতৃঘাতি ঘটনাও সংঘটিত করার তথ্য ফাঁস হয়েছে। একজন হিজড়া (তৃতীয় লিঙ্গের) শিশুকে টার্গেট করে ফক্সি দলিল ও তপশীল নিয়ে দুর্দান্ত প্রতারণার প্রমাণ মিলছে। নি:স্বত্তবান ব্যক্তির সন্তানরা বিরোধীয় জায়গাটিতে নির্মাণ করছেন অবৈধ স্থাপনা। এ নিয়ে স্থানীয় দু’পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিয়েছে। বৈধ মালিকদের হটিয়ে ওই জায়গায় একটি প্রভাবশালী চক্র মার্কেট নির্মাণকাজ আরম্ভ করে। তবে প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে তারা ভাড়াটে লোকজনও জড়ো করে। ভোরের দিকে শতাধিক দাগী ও ফেরারী লোকজনের উপস্থিতিতে দোকানঘর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে। এ সময় জায়গার মালিকদের ওই স্থানে না আসতে ব্যাপক বাধা প্রদান করা হয়েছে। এক পর্যায়ে অস্ত্রধারী জড়ো করে ভোরের দিকে স্বশস্ত্র মহড়াও দেয়া হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবী করেছে। আধিপত্যকে কেন্দ্র করে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মেহেরনামা নন্দীরপাড়া ষ্টেশনে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর সুত্র ধরে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের খুন খারাবীর আশংকাও প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। ফক্সি দলিল সৃজন করে ওই চক্র তথ্যের বিভ্রাট ঘটিয়ে জমাভাগ খতিয়ানও সৃজিত করে। জমিতে মার্কেট স্থাপনের জন্য ওই চক্র রাতেই নির্মাণ সামগ্রী মজুদ করে। সন্ত্রাসীদের বলয় তৈরী করে তারা সেখানে কয়েকটি দোকানঘরও নির্মাণ করে। তবে জায়গা নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। এর আগেও আরেকবার জায়গার জবর দখলের প্রচেষ্টা হয়েছিল। তবে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে প্রথমবার প্রতিহত হয়েছে। এ সময় জবরদখলকারীদের হামলায় জায়গার মালিক ফরিদুল আলম জখম হয়েছিল। স্থানীয়ভাবে এ বিষয়ে বৈঠকও হয়। ফৌজধারী মামলা এড়াতে হামলাকারীরা লিখিত অঙ্গীকার দেন। সেখানে শর্ত ছিল জায়গার বিষয়ে মামলা বিচারাধীন আছে। দেওয়ানী নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা জায়গায় অনুপ্রবেশ ও স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকবে। ওই শর্ত ভঙ্গ করে বিরোধীয় জমিতে তারা ফের স্থাপনা নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছেন। প্রাপ্ত সুত্র জানায়, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের নন্দীরপাড়া ষ্টেশন ও এবিসি সড়ক পয়েন্টে ৬০ শতক জায়গা নিয়ে মৃত আহমদ হোসাইনের পুত্র মোস্তফা কামাল গং ও মৃত মোজাফ্ফর আহমদের পুত্র ফরিদুল আলম, মৃত আবু তাহের মেম্বারের পুত্র সালাহ উদ্দিন গংদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। সুত্র জানায়, জায়গাটি আবু তাহের মেম্বারদের দীর্ঘ ভোগ দখলীয় সম্পত্তি। তবে আবু তাহের মেম্বার ও আহমদ হোসাইন জীবিত থাকা অবস্থায় জায়গা নিয়ে দ্বন্ধের সুত্রপাত হয়েছিল। বর্তমানে তারা দুইজনেই মৃত্যুবরণ করেন। জায়গার বিষয়ে দেওয়ানী নিস্পত্তি নিয়ে একাধিক মামলাও হয়েছে। কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে আহমদ হোসেনের পিতার নাম মৃত আবদুল কাদের। পৈত্রিক সুত্রে হিস্যামতে আহমদ হোসাইনের প্রাপ্ত সম্পত্তি ০.৮২১২ একর জমির মালিক হন। উক্ত প্রাপ্ত অংশ থেকে তিনি পৃথক ৭ টি কবলামূলে ২ একরের কিছু কম সম্পত্তি বিক্রি করেন। তিনি মৃত্যুবরণ করার আগেই সম্পত্তি বিক্রি করে নি:স্বত্তবান হয়ে যান। তবে চাল চাতুরী করে একটি দলিল উপস্থাপন করেন। সুত্র জানিয়েছেন ৮০ শতক জায়গা নিয়ে অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে। ১৯৭২ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারী একটি দলিল সৃজিত হয়েছে। যার নং ১৪৪৩। ওই দলিলটি ফক্সি দলিল হিসেবে ইতিমধ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। জানা গেছে, জাল জালিয়তির মাধ্যমে একটি ভূয়া দলিল সৃজন করে আহমদ হোসাইন প্রতিপক্ষের সম্পত্তি কুক্ষিগত করার প্রয়াস করছিলেন। পরবর্তীতে দলিলের তপশীল নির্ণয় করার সময় এর সরেজমিন চিত্র ফুটে উঠে। ওই দলিলের উল্লেখিত সম্পত্তির তপশীল পেকুয়ার মধ্যে পড়েনি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে কবলা নং ১৪৪৩ এর মৌজা ও তপশীল চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ থানার বাকলিয়ায়। যার দাগ নং ৫১৯০, ৫৩৮৭, ২১০১১, ২১০১২ দাগাদির জমি ওই দলিলে কবলা হয়েছে। আইন আদালত ও বিচারিক শুনানীতে আবু তাহের গংদের পক্ষে মোজাফ্ফর আহমদের পুত্র ফরিদুল আলম গং বিষয়টি যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে কোন বিষয়ে আহমদ হোসাইনের ছেলে মোস্তফা গং বিরোধীয় জায়গার স্থিতি ও এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন। এতে করে ওই চক্র রাতারাতি জায়গাটি সন্ত্রাসী কায়দায় জবর দখলে নেয়। এ ব্যাপারে আবু তাহের মেম্বারের ছেলে সালাহ উদ্দিন প্রকাশ হিরু বলেন, আহমদ হোসাইনের কোন স্বত্ত এখানে নেই। তিনি জায়গা পাবেন ০.৮২১২ একর। ২১-০৫-৯০ ইং তারিখে ২৩১৩ নং কবলামূলে রশিদ আহমদকে ২০শতক, ১১-১১-১৯৮৯ ইং মোহাম্মদ আশেক ইলাহীকে ২০ শতক, ২১-০৬-৯৮ ইং জাহাঙ্গীর আলমকে ৪০ শতক, ১১-০১-১৯৯৯ ইং একই ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমকে ২০ শতক, ১৭-০৫-৮২ ইং শিলখালীর মাহাফুজুর রহমানকে ৪০ শতক বিক্রি করে। এ ছাড়াও মর্জিনা বেগম নামক মহিলাকে ২০ শতক, সেনা সদস্য নুরুল আবছারকে ৩০ শতকসহ ২ একরের কিছু কম জায়গা আহমদ হোসন বিক্রি করেন। একটি ভূয়া দলিলে সম্পত্তির জটিলতা তৈরী করেছেন। আমরা ওই দলিলের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তারা ভূয়া দলিল নিয়ে জায়গার খতিয়ানও করেন। আমরা খতিয়ানের বিরুদ্ধেও মামলা করেছি। সব ডকুমেন্ট আমাদের অনুকুলে। তবে এ সব না মেনে সন্ত্রাসী নিয়ে আমাদের ভোগ দখলীয় জায়গা জবর দখলে মেতেছে। আবু তাহের গংদের পক্ষে মোজাফ্ফর আহমদের পুত্র ফরিদুল আলম জানান, তারা এখন কাগজ নিয়ে আর পাত্তা পাচ্ছেন না। এখন জবর দখলের দিকে ঝোঁকছেন। আমরা জেনেছি আহমদ হোসেনের ছেলে মোস্তফা কামাল গং এখন খুন খারাবীর দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। আমরা জায়গার কথা বললে তারা আমাদেরকে মামলা মোকদ্দমায় জড়াবেন। না হয় চলাফেরায় আমাদেরকে প্রাণনাশ করবেন। নকিব নামক মোস্তফা কামালের ১১ বছর বয়সী একজন শিশু সন্তান রয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) শিশুটি তার আবেগের কথা মানুষকে জানিয়েছে। জায়গার বিষয়ে আমাদেরকে ফাঁসাতে নকিবকে প্রয়োজনে হত্যা করা হবে। ওই তথ্য শিশুটি পাড়া প্রতিবেশীদের বলে ফেলেছেন। সালিশি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে সালিশকারদের কাছে এসে শিশুটি তার পিতার মনের ভাব প্রকাশ করেছে। বলেছেন, আমার পিতা আমাকে খুন করে আপনাদের ফাঁসাবে।